Crimer Sondhane

রাজধানীতে বিরিয়ানির দোকানে অবৈধ গ্যাসে রান্না ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি

রাজধানীর ব্যস্ত জনপদে অবস্থিত এক বিরিয়ানির দোকানকে ঘিরে উঠেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে দোকানটি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করে এবং অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিরিয়ানি, তেহারি, কাচ্চি, রোস্টসহ নানা ধরনের খাবার প্রস্তুত করছে। প্রতিদিন শত শত ক্রেতা সেখানে ভিড় জমালেও খাবার তৈরির ভেতরের বাস্তব চিত্র দেখে হতবাক হয়েছেন স্থানীয়রা।

নোংরা পরিবেশে রান্নার অভিযোগ
সরাসরি রান্নার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের ভেতরে এবং পেছনের রান্নাঘরে জমে আছে আবর্জনা, নোংরা পানি এবং তেলাপোকার আনাগোনা। রান্নার বাসনপত্র ধোয়ার কোনো সঠিক ব্যবস্থা নেই। ব্যবহৃত কড়াই ও হাঁড়িতে জমে থাকা ময়লা এবং একাধিকবার ব্যবহৃত তেল দিয়েই প্রতিদিন রান্না করা হয়।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন—

“খাবারের স্বাদ থাকলেও ভেতরের পরিবেশ এতটাই খারাপ যে, এসব খাবার খাওয়া মানে শরীরকে রোগের হাতে তুলে দেওয়া।”

নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দোকানটি বাজার থেকে সবচেয়ে নিম্নমানের চাল, মাংস, তেল এবং মসলা কিনে খাবার তৈরি করছে। এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ ডালডা ও ঘি ব্যবহার করাও একটি নিয়মিত ঘটনা। এভাবে খাবার তৈরি হলেও তা বাইরে থেকে বুঝে ওঠা কঠিন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের বা মেয়াদোত্তীর্ণ উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবার খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হতে পারে।

অবৈধ গ্যাস সংযোগে রান্না
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দোকানটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করছে। গোপনে সংযোগ নিয়ে তারা বিশাল চুলায় প্রতিদিন কয়েকশো প্লেট খাবার রান্না করছে। এভাবে অবৈধ জ্বালানি ব্যবহার শুধুই আইন ভঙ্গ নয়, বরং জাতীয় সম্পদের অপচয়ও ঘটাচ্ছে।

এ বিষয়ে এক ভুক্তভোগী বাসিন্দা বলেন—

“এভাবে গ্যাস চুরি করে ব্যবসা করলে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে, আর ভোক্তারা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

আইন কী বলছে?
🔹 ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী, ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রস্তুত ও বিক্রির দায়ে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান রয়েছে।
🔹 এনার্জি আইন অনুযায়ী, অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করাও একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য মালিককে জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যেতে পারে।

স্থানীয়দের দাবি
এলাকাবাসী জানান, বহুদিন ধরে তারা দোকানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন, কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন—অবিলম্বে দোকানটি বন্ধ করা হোক এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

একজন সচেতন নাগরিক বলেন—

“প্রতিদিন আমাদের সন্তানরা এখানে খাবার খায়। যদি এভাবে চলতে থাকে তবে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে।”

  • সমাপনী মন্তব্য
    রাজধানীর মতো জায়গায় এমন অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও নোংরা পরিবেশে খাবার প্রস্তুত জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় সম্পদের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *